লিয়াকত হোসেন (লিংকন): পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কাশিয়ানী উপজেলার কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, কৃষি উপকরণের মূল্য ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, পাট পঁচানোর পানির অভাব ও শ্রমিক সংকটের কারণেই পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা।
পাটের বদলে বোরো ও আমনসহ অন্যান্য লাভজন ফসলের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে দিন দিন এ উপজেলায় পাটের আবাদ কমে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাশিয়ানী উপজেলায় চলতি বছরে ৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছর ৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। যা গত বছরের চেয়ে এবার ৩২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কম হয়েছে। প্রতি বছরই এভাবে পাটের আবাদ কমে যাচ্ছে।
পাটচাষীরা জানান, এক বিঘা জমিতে চাষ থেকে শুরু করে জাগ দেয়া পর্যন্ত তাদের খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু বিঘা প্রতি তাঁরা ১০ থেকে ১২ মণ পাট পেয়ে থাকেন। বর্তমানে বাজারে এ পাটের মূল্য মণপ্রতি ১৭ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা। নি¤œমানের পাট আরো অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে অনেকেই পাট বিক্রি করে কাঙ্খিত লাভের মুখ দেখতে পারবে না বলে আশংকা করছে।
এদিকে, বর্ষা মৌসুমেও এ অঞ্চলে পানির দেখা নেই। পাট জাগ দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পাট কাটার ভরা মৌসুমে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকার আশংকায় বিপাকে পড়বেন কৃষকরা। নিম্নাঞ্চলের চাষীরা পাট জাগ দিতে পারলেও চরাঞ্চলের চাষিরা পাট জাগ দিতে পারবেন না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
ফুকরা গ্রামের কৃষক কাওছার আলী বলেন, ‘পাটের আবাদ করে বেশ কয়েকবার লাভের মুখ দেখতে পারিনি। গত বছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করলেও, এবার সংসারের প্রয়োজনে জ্বালানী হিসেবে মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি।’
উপজেলার রাতইল গ্রামের কৃষক ফুল মিয়া বলেন, ‘গত দু’বছর পাটচাষ করে পানির অভাবে পাট পঁচাতে চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এবারও পানির দেখা নেই জমির পাট জমিতেই রেখে দিতে হবে। এছাড়া পাটের আঁশ ছাড়াতে শ্রমিক পাওয়া যায় না।’
অন্যদিকে, চাষীদের নিকট থেকে পাট কিনে লাভের একটি বড় অংশ হাতিয়ে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়ারা। ভাল মানের সোনালী আঁশের পাটের মণ কমপক্ষে ২৫ শ’ টাকা নির্ধারণের দাবি কৃষকের।
কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রসময় মন্ডল বলেন, ‘পাটবীজ বপন ও কাটা মৌসুমে শ্রমিক সংকট, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বিগত সময়ে পাটের বাজারদর কম হওয়ায় কৃষরা পাটচাষের আগ্রহ হারাচ্ছে।’